টিপস এন্ড ট্রিকস

বরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় – স্বামীকে নিজের হাতে রাখুন

বরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়: সাংসারিক জীবনে স্বামী এবং স্ত্রী পরস্পরকে ভালবাসতে এবং সুখী জীবনযাপন করার জন্য স্বামী যেমন স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ববোধ দেখাবে তেমনি স্ত্রী ও স্বামীর প্রতি দায়িত্ববোধ দেখাবে।  এ আর্টিকেলটিতে বরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ৮টি সহজ উপায় সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

বরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

 বিবাহিতদের মনের সব থেকে বড় আক্ষেপ কি বলুন তো? বেশিরভাগই বলবেন,  হাই স্বামী যদি আমার কথা একটু শুনো!  আক্ষেপ এতটাই যে,  সেই কথা রেলস্টেশন,  বাস স্টপ,  ট্রাম লাইন সহ কোথাও চাপা থাকেনা।  মহিলাদের নাকি  সব আড্ডায় শেষ হয়  এই বিষয়ে গল্প করতে গিয়ে।  কিন্তু আক্ষেপ করলে কি চলবে?  সংসার বড় জটিল বিষয়।  শুধু শাসন করে নিয়েছেন  কি  পা পিছলে পড়বেন!  সুতরাং খুব সহজে সাংসারিক জীবনে সুখী হতে হিসাব-নিকাশ করে চলতে হবে বৈকি। আর সেজন্যই নিচে উল্লেখ করলাম স্বামীর মন জয় করার একটি উপায়।

 সব সময় নরম নয়

 ১)  সব সময় নরম নয় – 

আপনার নরম মনোভাব স্বামী পছন্দ করবেন ঠিকই।  এর জন্য হয়তো দিনের শেষে কপালে বেশ প্রশংসাও জুটবে।  কিন্তু আদপে আপনারই ক্ষতি!  হাত থেকে ফসকে যাবে অনেক কিছুই।  সুতরাং সব সময় স্বামীর হাতে হ্যাঁ আর নাতে না মিলাবেন না।

  তবে হুটহাট করে তার প্রতিবাদ করে বসবেন না।  যখন স্বামী শান্তশিষ্ট এবং মনোরম অবস্থায় থাকবে,  তখন বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের যুক্তি দেখিয়ে তার খারাপ কাজ বা নেতিবাচক কথার প্রতিবাদ করুন।  সম্ভব হলে তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলুন অযথা ঝগড়াঝাটি এড়িয়ে চলুন।

বরকে নিজের অনুভূতির খেলায় রাখুন

 ২) বরকে তাঁর অনুভূতির খেলায় রাখুন –

কথায় আছে মেয়েরা নাকি মন পড়তে ওস্তাদ।  যদি তাই সত্যি হয়,  তাহলে আপনার মধ্যেই লুকিয়ে থাকা বিশেষ গুন্ডা কে কাজে লাগান।  সময় পেলেই চট করে স্বামীর মন পড়ে ফেলুন।  সে কি চায়?  তার ভালোলাগার কি জিনিস,  এবং তার খারাপ লাগার বিষয়গুলো  আগেভাগেই অনুমান করে নিন।  তবে তার সব কথার বিপক্ষে কথা বলে, তাকে খুব বেশি চলে যাবেন না।

কি করে আমি বরকে control করব

বরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ৮টি সহজ উপায় স্বামীকে নিজের হাতে রাখুন
বরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ৮টি সহজ উপায় স্বামীকে নিজের হাতে রাখুন

 বরং তার পছন্দের খাবার তাকে রান্না করে দিন,  তার কাজটি তার করার চেষ্টা করুন।  সে আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি কোন জিনিসটা আশা করে,  সম্ভব হলে সেটাও করে দেখান।  মাঝেমধ্যে তার প্রিয় খাবার এবং প্রিয় গিফট গুলো আপনার সামর্থের মধ্যে তাকে উপহার দিতে পারেন। অফিস থেকে আপনার স্বামী ফেরার আগেই,  আপনার মনকে ফুরফুরা করার চেষ্টা করুন।  এবং নিজের ইচ্ছায় তার প্রিয় খাবার টা তৈরি করে ফেলুন। 

স্বামীকে হতাশার সময় উৎসাহ দিন

 ৩) মাঝে মধ্যে বরকে উৎসাহ দিন –

অনেক সময় কর্মজীবনে বা সাংসারিক বিভিন্ন টেনশনের কারণে আপনার স্বামী হয়তোবা হতাশায় ভোগবে।  সেহেতু সব সময় আপনাকে স্পষ্ট করে সব কিছু বলবেনা,  কিন্তু তার মেজাজ এবং পরিস্থিতি দেখে অনুমান করে নিবেন তার সময়টা এখন কিরকম যাচ্ছে। সেই মুহূর্তে বুদ্ধিমত্তার সাথে,  আপনার জীবনসঙ্গীর সবচেয়ে প্রয়োজন আপনার উৎসাহ ও উদ্দীপনা এবং কোমল হৃদয়ের ভালোবাসা!  তাকে তার কর্মের ব্যর্থতার জন্য,  অথবা তার যেকোন টেনশনের ক্ষেত্রে তাকে উৎসাহ দিন। মনে রাখবেন ব্যর্থতা এবং বিভিন্ন হতাশার সময় মানুষ হিসেবে সে তার প্রিয়জনকে পাশে চায়।  আপনি ঠিক সেটাই করবেন,  যাতে করে সে তার হতাশা ও ব্যর্থতার গ্লানি কে কাটিয়ে উঠতে পারে। 

স্বামীর ভুলগুলোকে মাঝেমধ্যে হজম করবেন

৪) মাঝেমধ্যে বরের ভুলের জন্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন

মানুষ মাত্রই ভুল হয়।  তবে, সেটা যদি হয় পুরুষ মানুষ সে ক্ষেত্রে তার ভুল করার প্রবণতা একটু বেশি থাকে।  কারন পুরুষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সে নিজেকে নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখতে পারেনা।  যার সুবাদে কাজ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ধরনের এমন সব কর্মকাণ্ড করে,  যেটা আপনার কাছে মনে হতে পারে সে ভুল করেছে।

 তবে সতর্ক থাকুন!  কারণ হতেই পারে হাজারো সাবধান করা সত্ত্বেও আপনার স্বামী কোন সাংঘাতিক ভুল করে ফেলেছেন। এর জন্য হয়তোবা আপনার কষ্ট হবে,   তবুও নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখবেন।  চোখ পাকিয়ে রে রে করে উঠবেন না!  এতে হয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে।  বরং তাকে কাজে উৎসাহ দিন, এবং তাকে অন্যান্য কাজগুলো করতে দিন।  এবং পরে সময় মতো তাকে বুঝিয়ে বলুন।  অর্থাৎ ভবিষ্যতে যাতে সে এধরনের ভুল না করে সেজন্য তাকে কোমল ভাবে বুঝান।

আরও পড়ুন ;  সেরা ১০টি গাড়ির ড্রাইভিং টিপস - নতুন চালকদের জন্য কৌশল

স্বামীকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে স্বামীর প্রতি সংবেদনশীল হন

৫) আপনার বরের প্রতি অনেক বেশি সেনসিটিভ হন –

ছেলেরা সাধারণত মেয়েদের থেকে অনেক বেশী সেনসিটিভ হয়ে থাকেন।  যৌন জীবন লাইফে আপনি যদি সন্তুষ্ট হয়ে না থাকেন,  তাহলে তার জন্য নিজেদেরকেই দায়ী করে থাকেন হয়তো।  অর্থাৎ হয়তোবা আপনি নিজের প্রতি দোষারোপ করেন,  অথবা স্বামীকে যৌনকর্মক্ষম মনে করেন। যেটা আপনার স্বামীকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলতে পারে।

সুতরাং নিজের মনের মধ্যে কথা চেপে না রেখে,  তাকে বোঝান আপনি আপনার স্বামীর কাছে কতটা সুখে আছেন।  এবং ভবিষ্যতে সুখের ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখতে আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে তাকে আরও পরামর্শ দিতে পারেন।  এতে করে আপনার প্রতি আপনার স্বামী যেভাবে বিশ্বস্ত হবে,  তেমনি সাংসারিক জীবনে পরস্পর পরস্পরকে সুখী করতে পারবেন।

স্বামীর দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন

৬) বরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিত্যনতুন লাইফস্টাইলের পরামর্শ দিন –

পুরুষ ব্যক্তিত্ব মানেই নানা রকম কাজের চাপে,  নিজের প্রতি যত্নশীলতা এবং জীবনযাপনের ভিন্নতার আনন্দ উপভোগ করতে ভুলে যায়।  সুতরাং তার কাজের চাপে যেগুলো সে ভুলে যায়,  আপনি স্ত্রী হিসেবে সে গুলোকে মনে করিয়ে দিন।  যেমন ধরুন তাকে এটা মনে করিয়ে দিলেন যে:  ফোনে মায়ের খোঁজ খবর নেওয়া উচিত। কিংবা পোর্টফোলিওতে এবার একটু পরিবর্তন আনা দরকার।

 অথবা তার সোশ্যাল মিডিয়া ডিপিতে নতুনত্ব কিছু আপলোড করা প্রয়োজন।  অথবা তাকে জানাতে পারেন,  কোন কোন কোম্পানিতে তিনি ইন্টারভিউ দিলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।  এতে করে আপনার স্বামী আপনার উপর কোন বিষয়ে নির্ভরশীল হতে পারবে এবং পাশাপাশি জীবনসঙ্গিনী হিসেবে ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডে আপনাকে তার জীবণের পরামর্শক হিসেবে ভাবতে শুরু করবে। 

সুযোগ বুঝে ঘরের কাজে স্বামীকে দায়িত্ব দিন

৭) ঘরের কাজেও আপনার বর’কে দায়িত্ব দিন –

শুধু অফিসার বাইরের কাজ ই নয়,  বরং সপ্তাহে অন্তত একদিন তার উপরই ঘরের বেশিরভাগ কাজটা ছেড়ে দিন।  যেমন ধরুনঃ  দুপুরের লাঞ্চ এ কি খাবেন,  অথবা আগামীকাল অফিসে কি নিয়ে যাবেন সেই সিদ্ধান্তটা তাকে নিতে বলুন।  প্রয়োজন হলে তাকে বাজার করতে বলুন,  এবং এই ফাঁকে আপনার পছন্দের জিনিসটা তার কাছ থেকে চেয়ে নিতে ভুলবেন না।

যেমন ধরুন ছোট্ট একটি চকলেট,  অথবা কোনো পছন্দের ছোট গিফট!  এতে করে আপনার স্বামী খুশি হয়ে যাবে।  কারণ অধিকাংশ পুরুষই চায়,  তার স্ত্রী তার কাছে কিছু বায়না করুক ( কিন্তু এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার স্বামীর সামর্থের প্রতি এবং সময়ের সুবিধার প্রতি  আপনাকে যত্নশীল হতে হবে।)।

স্বামীকে রুমান্টিক বানাতে শিখুন

৮) বরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাকে রোমান্টিক বানান

একজন মেয়ে হিসেবে আপনি যেমন সাজসজ্জা  এবং উন্নত জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন।  অনেক ক্ষেত্রে একজন পুরুষ তার সম্পূর্ণ ভিন্নতায় জীবনযাপন করতে পছন্দ করে,  অর্থাৎ প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত সাজসজ্জায়  মেতে থাকতে পছন্দ করে না।  যার ফলে,  স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন বা ইভেন্টে যাওয়ার আগে মন-কষাকষি হতে পারে।

 সেজন্য আপনি যেমন রোমান্টিকতা পছন্দ করেন,  তেমনি আপনার স্বামীকে আপনার মত সাজসজ্জা এবং বিভিন্নভাবে রোমান্টিকতায় অভ্যস্ত করে তুলুন।  দেখবেন আপনার স্বামী সব সময় আপনাকেই তার চিন্তাভাবনা রাখবে  এবং আপনার কাছে তাকে আরো দৃষ্টিনন্দিত করার জন্য নিজেকে আরও সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবে। 

যখন দুজনে কোথাও ঘুরতে যাবেন,  তখন আপনার স্বামীকেও উন্নত পোশাকে সাজাবেন।  শপিং মল কিংবা কোন মার্কেটে কেনাকাটা করার সময়ঃ  আপনার স্বামী যখন আপনার জন্য কিছু ক্রয় করবে,  তখন আপনি পছন্দ করে তাকেও কিছু ক্রয় করার জন্য সাহায্য করুন।  এতে করে আপনাদের ভালোবাসার কেমিস্ট্রি আরো ভালো মতই জমবে। 

স্বামীকে রোমান্টিক করার উপায়

কথায় আছে সংসার সুখী হয় রমনীর গুনে। উক্তিটির প্রাসঙ্গিকতা ঠিক কতটুকু রয়েছে সেটা আমার জানা না থাকলেও,  অন্তত এতটুকু বলতে পারি যে: সুখের সংসার গড়তে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের ভূমিকায় গুরুত্বপূর্ণ। 

সুতরাং আপনার স্বামী তথা জীবনসঙ্গীকে সবসময় তার কাজে সাপোর্ট করুন। এবং যেকোন মুহুর্তে তার পাশে থাকুন। এতে করে আপনার স্বামীর হৃদয়ে শান্তি লাগবে,  এবং প্রতিনিয়ত আপনাকে তার ভাল লাগতে থাকবে।  এমনকি  তিনি মনে করবেন যে, তিনি আপনার ভালোবাসায় আছেন। একজন স্ত্রী হিসেবে তার প্রতি ভালোবাসার কোন কমতি রাখবেন না।  তাকে বুঝতে দিন আপনার জীবনে তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ,  তাহলে তিনিও বুঝতে পারবেন তার কাছে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। 

 মনে রাখবেন,  আপনার স্বামী কে ভালোবাসায় ভরে রাখতে পারলে;  তিনিও আপনার প্রতি যত্নশীল হতে শুরু করবে এবং আপনাকে সবসময় বুঝার চেষ্টা করবে।  এবং তার হৃদয় জুড়ে একমাত্র আপনি সবচাইতে প্রিয় জন হিসেবে বিচরন করতে থাকবেন।

পরিশেষে,

 অবশেষে বরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় হিসেবে আমি বলবঃ  তার ইচ্ছা অনিচ্ছা,  ভালো ও মন্দ লাগা,  এবং স্বামীর সুখে-দুখে তার পাশে থাকলে সব সময় আপনার বর আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যদি আপনার কোন মতামত বা প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা করার থাকে,  তাহলে অনুগ্রহ করে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।।

Related Articles

Leave a Reply