অন্যন্য

ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যায় কেন? তুফান হলে কারেন্ট বন্ধ থাকে

ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যায় কেন?  ঝড়ের সময় কারেন্ট সরবরাহ বন্ধ রাখার অন্যতম কারণ হলোঃ  তার/ বর্তনী ছিড়ে গিয়ে  অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।  আর যদি হঠাৎ বজ্রপাত বাজ পড়ে,  তাহলে অনেক বেশি হাই ভোল্টেজ এবং হাই ফ্রিকোয়েন্সির সৃষ্টি হয় ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি গুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যায় কেন?

অনেক সময় এমনটা ঘটে,  এই বিদ্যুৎ আসছে তো আবার চলে যাচ্ছে।  যেটাকে আমরা লোডশেডিং বলতে পারি।  মাঝেমধ্যে বিরক্তির মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে মিনিটের মধ্যে কয়েকবার কারেন্ট চলে যায় আবার আসে।  তখন হয়তো আমরা গালিগালাজ করি;  দূর!  কি একটা অবস্থা,  কারেন্ট ওয়ালারা একটা তামাশা শুরু করছে,  ইত্যাদি। 

 আপনি হয়তো ভাবছেন যে এটা  বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কেউ ইচ্ছা করে করছে।  কিন্তু আপনার  ধারণাতে ভুল!  তাহলে বারবার ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যায় কেন?  আসল ব্যাপারটা কি?

 তাহলে চলুন ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যায় কেন এই মেকানিজমটা খুব সহজ করে একটু বুঝে নেইঃ

আমরা বাসা বাড়িতে যে বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি সেটা মূলত একটি বিদ্যুৎ বিতরণ  উপকেন্দ্র থেকে পাই,  যেটাকে সাব স্টেশন বলা হয়।  এই সাবস্টেশন উপকৃত একটি নির্দিষ্ট বৃহৎ আকারের রুমে আলমারির মতো বড় সাইজের একটি মেশিন স্থাপন করা থাকে  এবং এই মেশিনগুলো কে বলা হয়।  ফিডার গুলোর মধ্যে প্রত্যেকটি ফিডারের মাধ্যমে এক একটা এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয়।  সুতরাং এই ফিডার মেশিন অফ মানে ওই এলাকার  বিদ্যুৎ  সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।

 বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণ

তো চলুন জেনে নেওয়া যাক বারবার কারেন্ট চলে যাওয়ার কারন কি?

সাধারণত বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার যে কারণ রয়েছে সে কারন গুলোকে আমরা ফল্ড হিসেবে বিবেচনা করে থাকি।  তাহলে প্রশ্ন হল সাবস্টেশন বা বিদ্যুৎ বিতরণ  কেন্দ্রে অথবা বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে কি ধরনের ফল্ট হলে কারেন্ট সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়?

বাসা বাড়িতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে।  তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চারটের কারণ হলোঃ

  1. কারেন্ট সঞ্চালন লাইনে তিনটা তার থাকে,  এটার গুলোকে একসাথে ফেইজ বলা হয়। A, B, C ফেইজ। অনেক সময় বাতাসের তীব্র গতির কারণে শেষ তিনটা একসাথে লেগে যায় বা স্পর্শ করে। তখন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বা সাবস্টেশনের ফিডার ফল্ড করে মানে আপনার বাড়িতে বিদ্যুৎ যাওয়ার সঞ্চালন ফল্ট হয়।
  2.  ঝড়-বৃষ্টি বা তীব্র বাতাসের কারণে গাছগাছালি ভেঙ্গে ফেইজ তার এর উপর পড়লে অথবা ফেইজ তারগুলো পরস্পরের সাথে একবার বাড়ি খেলেও সাবস্টেশনের ফিডার মেশিনে ফল্ট করে।
  3. অনেক সময় আপনার নিকটস্থ ট্রান্সফর্মার মেশিনে সমস্যা হলেও কারেন্ট সঞ্চালনে ফল্ড করে।
  4.  কখনো কখনো কোন মানুষের হাতের স্পর্শ পেলে বাপকেও কারেন্টের শক খেলেও বিদ্যুৎ সঞ্চালন এ ফল্ট করে। 

কারেন্ট ফল্ট করলে কি হয়?

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে যে কারেন্ট ফোন করলে কি ঘটে?  এক কথায় বললে ফল করার মানেই অটোমেটিক ভাবে  কারেন্ট অফ হয়ে যাবে।  আর এই ফোল্ডার কারণে অফ রোধ করার মত বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের আগে থেকে কিছু করার নেই!  অর্থাৎ ধরুন 20 কিলোমিটার দূরে বাতাসের কারণে গাছের ডাল নড়াচড়া করে কারেন্টের তার গুরু পরস্পরের সাথে স্পর্শ করেছে বাবারি মারছে,  তখন অটোমেটিকভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন ;  হ্যালো গুগল আমি এখন কোথায় আছি? বর্তমান লোকেশন বের করুন Google Maps Location Find

 ঝড়ে গাছ ভেঙ্গে পরে বিদ্যুৎ চলে গেলে কি হয়?

ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যায় কেন তুফান হলে কারেন্ট বন্ধ থাকে
ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যায় কেন তুফান হলে কারেন্ট বন্ধ থাকে

ঝড়-বৃষ্টিতে গাছপালা ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন এর তার ছিড়ে গেলে,  মিলি সেকেন্ডের মধ্যে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ হয়ে যায়।  এবং পরবর্তীতে তাঁর না লাগানো পরযন্ত আমরা ইচ্ছা করলে কারেন্টের লাইন চালু হবে না।  সেটা সম্ভব নয়!

মিনিটে কয়েকবার লোডশেডিং হয় কেন?

কারেন্ট সঞ্চালনে ভোটের কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়,  এটা তো বুঝলাম।  কিন্তু মিনিটে কয়েকবার বিদ্যুৎ আসে যায় কেন,  অর্থাৎ মিনিটে মিনিটে লোডশেডিং হয় কেন? উত্তরঃ বাতাসে এলোপাথাড়ি বাড়ি মারার কারনে ফিউজ তার গুলো পরস্পর বাড়ি মারতে থাকে স্পর্শ করে যার ফলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়।  তারপর সাবস্টেশনের কর্তৃপক্ষ তা আবার চালু করে,  আবার কিছুক্ষণ পর বাড়ি  মারলে কারেন্ট অফ হয়ে যায়।  এবং এ কারণেই মূলত মিনিটে কয়েকবার লোডশেডিং হয়ে থাক।

অতিরিক্ত লোডশেডিং ঠেকাতে করণীয় কি?

মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং ঠেকানোর অন্যতম একটি উপায় হল বিদ্যুৎ সঞ্চালন এর বিস্তার গুলোর আশেপাশে থাকা গাছপালা শাখা-প্রশাখা কেটে ফেলে পরিষ্কার করতে হবে।  কারণ গাছের ডাল বা শাখার  সংস্পর্শে আসলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব নয়। 

আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে,  সাব-স্টেশনের ফিডার মেশিন বাসাবাড়ির ON OFF  সুইচের মতো নয়,  যে চাইলেই যে কোন মুহূর্তে বন্ধ করা যাবে বা চালু করা যাবে।

বরং সাব-স্টেশনে একজন কর্মকর্তা থাকেন,  তিনি নিজের ইচ্ছায় কখনোই বিদ্যুৎ বন্ধ করতে পারেন না, আবার চাইলে চালু করতে পারেন না।  সুতরাং যেসকল ফটো গুলো উপরে উল্লেখ করলাম এগুলো ঘটলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বা কারেন্ট সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।  অথবা যদি  ফল্ট না হয়,  তাহলে বুঝতে হবে মেরামতের কাজ বা নতুন লাইনের সংযোগের জন্য অন্তত দ্বিতীয় শ্রেনীর অফিসারের নির্দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন  নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়।  অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত কোন  ঘটনার কারণে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়।  যেমন হুটহাট করে কোথাও আগুন লেগে গেলে,  কারেন্ট সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।

গ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘ সময় কারেন্ট না থাকার কারণ কি?

অনেকেই প্রশ্ন করবেন যে গ্রাম অঞ্চলে অনেক সময় ৩/৪  দিন কারেন্ট থাকে না কেন?  এর অন্যতম কারণ হলো গ্রাম অঞ্চলের লাইনগুলো এত চিপা চাপা দিয়ে যায় যে,  অনেক সময় খুঁজে পাওয়াই দুঃসাধ্য যে ফলগুলো কোথায় হয়েছে।  কারণ গাছপালা বা অনেক সময় ঝোপঝাড়ের কারণে বিদ্যুৎ সঞ্চালন এর  ফেইজ তার গুলোর  ফল্ট খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়।  অতঃপর অফিসার তার টিম নিয়ে সারা এলাকায় তন্নতন্ন করে  ফল্ট খুঁজে বের করার পর,  তার গুলোকে পরস্পর থেকে আলাদা করে পুনরায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়।  সুতরাং গ্রামাঞ্চলে ইচ্ছে করেই বিদ্যুৎ বন্ধ করা হয় না।

লোডশেডিং কি?

কারেন্ট বা বিদ্যুৎ সরবরাহে বাধা প্রদান করা যাতে কারেন্ট জেনারেটর প্লান্টে অতিরিক্ত লোড না হয়,  তাকে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট বলে।

অতিরিক্ত লোড শেডিং কেন হয়?

এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন শহরে অথবা গঞ্জে গ্রাম অঞ্চলের মতো তেমন ঝগ ঝগড়া বা গাছগাছালির ভেজাল নেই।  তাহলে শহরে বা অঞ্চলে দীর্ঘক্ষন ধরে লোডশেডিং হয় কেন?  হ্যাঁ একমাত্র লোডশেডিংয়ের কারণে ইচ্ছা করে লাইন বন্ধ রাখা হয়।  তবে এটাও কিন্তু সাবস্টেশনের কর্মকর্তার হাতে নেই,  বরণ প্রথম শ্রেণীর বা তার উচ্চ পর্যায়ের অফিসারের নির্দেশ অনুসারে লোডশেডিং করা হয়। অতিরিক্ত লোডশেডিং হওয়ার কারণ হল,  যখন বিদ্যুৎ সঞ্চালন এ অনেক বেশি লোড হয়ে যায় তখন Power Transformer  লোড নিতে পারে না।  সেজন্যই কেবল কোন একটা ফিডার বা নির্দিষ্ট কয়েকটি ফিডার বন্ধ করে রাখা হয়।  যাতে করে বিদ্যুৎ তৈরি করার জন্য কারেন্ট জেনারেটর প্লান্টে অতিরিক্ত লোড না হয়।

পরিশেষে,

তাহলে এবার বুঝতে পারলেন ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যায় কেন?  সুতরাং অযথা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না। 

যদি আপনার সব সময় বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি বিদ্যুৎ ব্যাকআপ নেওয়ার জন্য IPS  ব্যাটারির ব্যবস্থা করতে পারেন।  অথবা জেনারেটর ব্যবহার করতে পারেন।  কিংবা বর্তমানের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বহুল প্রচলিত সৃষ্ট সৌর প্যানেলের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ব্যবহার করা যেতে পারে।  অতিরিক্ত লোডশেডিং বা ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চলে যায় কেন এই বিষয়ে আপনার যদি কোন মন্তব্য থাকে অথবা কোন প্রশ্ন থাকে অনুগ্রহ করে  আপনার মতামত জানান।  ধন্যবাদ।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *