
প্রিয় পাঠক, ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের নামের তালিকা ও সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে ফিচারের আয়োজন। মুক্তিযুদ্ধে অসীম বীরত্বের জন্য ৭ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বীরত্ব খেতাব-বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এখানে আমি সেই ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের নামের তালিকা ও সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সেইসাথে আরও থাকছে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ দের নাম ও পদবী, বীরশ্রেষ্ঠ কতজন ও কে কে কে কোন সেক্টরে ছিলেন।
Summary Of Content: multyLoad
৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের নামের তালিকা
বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি কি ও কেন? বীরশ্রেষ্ঠ অসামান্য সাহসিকতার জন্য দেওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পুরস্কার। যুদ্ধক্ষেত্রে অতুলনীয় সাহস ও আত্মত্যাগের নমুনা স্থাপনকারী একজন যোদ্ধার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদক দেওয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সাত মুক্তিযোদ্ধাকে এই পদক দেওয়া হয়েছে।
গুরুত্বের ক্রমানুসারে বাংলাদেশের অন্যান্য সামরিক পদক হল – বীর উত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীক। এই পদকগুলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই পদক প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়।
বর্তমান সময়ে গুগোল একটি আধুনিক মাধ্যম। যেখানে আপনারা অনেকেই ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের নামের তালিকা জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। চলুন জেনে নেয়া যাক –
একনজরে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের নামের তালিকা
- শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমান।
- শহীদ সিপাহী মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল।
- শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মুহম্মদ।
- শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রব।
- শহীদ ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোঃ রুহুল আমনি।
- শহীদ ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মোঃ মতিউর রহমান।
- শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর।
৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের নাম ও পদবী
ক্রমিক নং | বীরশ্রেষ্ঠের নাম | পদবী |
০১ | মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর | ক্যাপ্টেন(বাংলাদেশ সেনা বাহিনী) |
০২ | হামিদুর রহমান | সিপাহী(বাংলাদেশ সেনা বাহিনী) |
০৩ | মোস্তফা কামাল | সিপাহী(বাংলাদেশ সেনা বাহিনী) |
০৪ | মোহাম্মদ রুহুল আমিন | ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার (বাংলাদেশ নৌ বাহিনী) |
০৫ | মতিউর রহমান | ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট(বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ) |
০৬ | মুন্সি আব্দুর রউফ | ল্যান্স নায়েক(বাংলাদেশ রাইফেলস) |
০৭ | নূর মোহাম্মদ শেখ | ল্যান্স নায়েক(বাংলাদেশ রাইফেলস) |
৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের জীবনী
১) মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।
শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর গ্রামে ৭ই মার্চ , ১৯৪৯ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল মোতালেব হাওলাদার এবং মাতার নাম সাফিয়া বেগম। তিনি সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি ৭ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। অতপর ১৯৭১ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর শহীদ হন।
২) হামিদুর রহমান।
শহীদ হামিদুর রহমান ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোর্দ্দ খালিশপুর গ্রামে ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আক্কাস আলী মন্ডল, মাতার নাম মোসাম্মাৎ কায়মুন্নেসা। হামিদুর রহমান সিপাহী পদে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে ৪ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ১৮ অক্টোবর সিলেটের শ্রীমঙ্গলের ধলই গ্রামে মৃত্যু বরণ করেন।
৩) মোঃ মোস্তফা কামাল।
শহীদ মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতপুর উপজেলার মৌটুপী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাবিবুর রহমান, তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার। সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ২ নং সেক্টরে যুদ্ধ রত অবস্থায় ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় মৃত্যুবরণ করেন।
৪) রুহুল আমীন।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালের জুন মাসে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বাঘপাঁচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আজহার পাটোয়ারী এবং মাতার নাম জুলেখা খাতুন। তিনি নৌবাহিনীতে স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে তিনি শহীদ হন।
৫) মতিউর রহমান।
পুরান ঢাকার ১০৯ আগা সাদেক রোড-এর মোবারক লজে ২৯ অক্টোবর ১৯৪১ সালে শহীদ মতিউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলভী আব্দুস সামাদ এবং মাতার নাম সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন। তিনি ছিলেন ফ্ল্যাইট লেফট্যানেন্ট। ২০ আগস্ট ১৯৭১ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে থাট্টা, পশ্চিম পাকিস্তানে তিনি শহীদ হন।
৬) মুন্সি আব্দুর রউফ।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ ফরিদপুর জেলার, মধুখালী উপজেলার সালামতপুর গ্রামে পহেলা মে ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুন্সি মেহেদি হাসান এবং মাতার নাম মুকিদুন্নেসা।
তিনি ছিলেন ল্যান্সনায়েক। এক নং সেক্টরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল বুড়িঘাট মহালছড়ি গ্রামে তিনি শহীদ হন।
৭) নূর মোহাম্মদ শেখ।
শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামে ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোঃ আমানত শেখ মাতার নাম জেন্নাতুন্নেসা।
নূর মোহাম্মদ শেখ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর ল্যান্স নায়েক। ৮ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালে ৫ সেপ্টেম্বর শহীদ হন।
৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের নাম মনে রাখার কৌশল
বিভিন্ন চাকরির ইন্টারভিউ কিংবা প্রতিযোগিতামূলক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় সাধারণত স্বাধীন বাংলাদেশের ৭ জন বীর শ্রেষ্ঠদের নাম মনে রাখতে পারে না। তার জন্য আজকে আমি আপনাকে মুক্তিযুদ্ধের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের নাম মনে রাখার টেকনিক সম্পর্কে বলব।
(মোহা মতিনূর মরু)
- মো – মোস্তফা কামাল
- হা – হামিদুর রহমান
- মতি – মতিউর রহমান
- নূর – নূর মোহাম্মদ
- র – মুন্সি আব্দুর রউফ
- ম – মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
- রু – রুহুল আমীন
বহুল প্রচলিত আরেকটি বীরশ্রেষ্ঠদের নাম মনে রাখার টেকনিক হলো:
(সাত হাজার মোম আন)
- সাত = ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ
- হা = হামিদুর রহমান
- জা = জাহাঙ্গীর
- র = রুহুল আমিন
- মো = মোস্তফা কামাল
- ম = মতিউর রহমান
- আ = আব্দুর রউফ
- ন = নূর মোহাম্মদ
বীর শ্রেষ্ট কত জন ও কে কে?

১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য ৭ জন কে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেওয়া হয়েছে । তাদের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ১। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর
- ২। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান
- ৩। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল
- ৪। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন
- ৫। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান
- ৬। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ
- ৭। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ।
৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের জন্মস্থান কোথায়?
ক্রম | বীরশ্রেষ্ঠে | জন্মস্থান |
০১ | মুন্সি আব্দুর রউফ | জেলা:ফরিদপুর, উপজেলা: মধুখালী, গ্রাম: সালামতপুর |
০২ | মোঃ মোস্তফা কামাল | জেলা: ভোলা,উপজেলা: দৌলতপুর, গ্রাম: মৌটুপী |
০৩ | মতিউর রহমান | জেলা: নরসিংদী, উপজেলা: রায়পুরা, গ্রাম: রামনগর |
০৪ | নূর মোহাম্মদ শেখ | জেলা: নড়াইল, গ্রাম: মহিষখোলা |
০৫ | হামিদুর রহমান | জেলা: ঝিনাইদহ,উপজেলা: মহেশপুর, গ্রাম: খোর্দ্দ খালিশপুর |
০৬ | রুহুল আমীন | জেলা: নোয়াখালী,উপজেলা: সোনাইমুড়ি, গ্রাম: বাঘপাঁচড়া |
০৭ | মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর | জেলা: বরিশাল, উপজেলা: বাবুগঞ্জ, গ্রাম: রহিমগঞ্জ |
৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ কে কোন সেক্টরে ছিলেন?
- ১) মুন্সি আব্দুর রউফ। সেক্টর নংঃ ১
- ২) মোঃ মোস্তফা কামাল। সেক্টর নংঃ ২
- ৩) মতিউর রহমান। সেক্টর নংঃ ০-কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেননি
- ৪) নূর মোহাম্মদ শেখ। সেক্টর নংঃ ৮
- ৫) হামিদুর রহমান। সেক্টর নংঃ ৪
- ৬)রুহুল আমীন। সেক্টর নংঃ ১০
- ৭) মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। সেক্টর নংঃ ৭
বীরশ্রেষ্ঠদের বিষয়ে আরও কিছু প্রশ্ন উত্তর
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল ভোলা জেলার দৌলতপুর উপজেলার মৌটুপী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের কবর কোথায়?
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামালকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা মোগড়া গ্রামে সমাহিত করা হয় । অর্থাৎ, কবর দেওয়া হয়।
সর্বকনিষ্ঠ বীরশ্রেষ্ঠ কে ছিলেন?
বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে সিপাহী হামিদুর রহমান ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ নাম কি?
ল্যান্সনায়ক মুন্সি আব্দুর রউফ শহিদ হন ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে প্রথম শহীদ ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য প্রদত্ত সর্বোচ্চ পুরস্কার কোনটি?
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানসূচক সর্বোচ্চ খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ।
বীর প্রতীক মানে কি?
বীর প্রতীক বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য প্রদত্ত চতুর্থ সামরিক পুরস্কার। মোট ৪২৬ জনকে এই উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
ইতিকথা,
এই আর্টিকেলটিতে আমি মূলত সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের নামের তালিকা ও তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল ত্রুটির দৃষ্টিগোচর হলে, অনুগ্রহ করে কমেন্ট করুন। পরবর্তী ভার্সনে সংশোধন করব।