স্বাস্থ্য টিপস

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়

জেনে নিন মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়? যিনি প্রথম মা হতে  চাচ্ছেন তার ক্ষেত্রে  এই প্রশ্নটা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও আরো কিছু প্রশ্ন মনে আসে, শারীরিক মিলনের কত দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়? পিরিয়ডের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়? গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়? 

প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা এরকমই কিছু  প্রেগনেন্সি রিলেটেড প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এসেছি।  আশা করি, যারা নতুন মা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের উপকারে আসবে।

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?

মাসিক বন্ধ হওয়ার মানেই কি গর্ভবতী
মাসিক বন্ধ হওয়ার মানেই কি গর্ভবতী

মাসিক মিস হলে যে আপনি গর্ভবতী হয়েছেন, তা কিন্তু নয়। আরও অনেক কারণেই আপনার মাসিক দেরিতে হতে পারে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো মানসিক চাপ, অসুস্থতা, নির্দিষ্ট কোন ঔষধ ব্যবহার করছেন।  আবার অনেক সময় দেখা যায় অনেকের অনিয়মিত ঋতুস্রাব।  

মাসিকের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সময়কে মাসিক চক্র  বলা হয়। কিছু সংখ্যক মহিলার ক্ষেত্রে মাসিক চক্র প্রতিমাসে একই সময়ে শুরু হয়।একই সংখ্যক দিন স্থায়ী হয়।  তাদের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সময় পিরিয়ড হয়ে থাকে। প্রতি মাসে ২৪ থেকে ৩৮ দিন ব্যবধানে যাদের মাসিক হয় সেটাকে অনিয়মিত মাসিক বলা হয়।

আপনার মাসিক যদি অনিয়মিত হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ আপনার যদি অনিয়মিত মাসিক হয় তাহলে প্রেগনেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

নিয়মিত মাসিক হয় তাদের ক্ষেত্রে: সাধারণত মাসিক মিস হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে ৯০ শতাংশ মহিলাদের গর্ভধারণের লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে। অনেকের হয়তো এর আগেও বোঝা য়ায়। কিন্তু প্রেগনেন্সির সম্পূর্ণ লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে পিরিয়ড মিস হওয়া ছাড়াও গর্ভধারণের আরো অনেক লক্ষণ রয়েছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয় মর্নিং সিকনেস। তবে এটা রাতেও দেখা দিতে পারে। এতে করে নারীরা শরীরে প্রচন্ড দুর্বলতা অনুভব করে। প্রচন্ড পরিমাণে মাথা ঘুরায়। মর্নিং সিকনেস দেখা যায় সাধারণত গর্ভধারণের এক মাস পর থেকে৷

মাসিক বন্ধ হওয়ার মানেই কি গর্ভবতী?

মাসিক বন্ধ হওয়ার কতদিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়? এ প্রশ্নের উত্তর আসলে একজনের জন্য একেক রকম হয়ে থাকে৷ কারো মাসিক বন্ধ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে৷ কারও দুই মাস চলে যায় কিন্তু কোনো লক্ষণ দেখা যায় না৷

শারীরিক মিলনের কত দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়?

শারীরিক মিলনের পর আসলে সাধারণত প্রেগনেন্সি টেস্ট করার কোন সঠিক সময় নেই ৷ শারীরিক মিলনের পরে পিরিয়ড মিস হওয়ার ১০ দিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক সময়৷ 

  • সঠিক সময়ে পিরিয়ড না হলে বা পিরিয়ড মিস হলে তার কমপক্ষে দশ দিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হয় ৷ 
  • প্রথমবার নেগেটিভ আসার পরেও যদি আপনার পিরিয়ড না হয় তাহলে তার ঠিক ৫ দিন পর পুনরায় টেস্ট করবেন ৷ 

প্রেগন্যান্ট হওয়ার কত দিন পর মাসিক বন্ধ হয়?

সাধারণত মহিলাদের ২৮ থেকে ৩৫ দিন পর পর সঠিক নিয়মে পিরিয়ড হয়ে থাকে ৷  গর্ভবতী হওয়ার পরবর্তী মাসে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। আপনার মাসিক নিয়মিত হলে হঠাৎ কোন মাসে বন্ধ থাকলে  বুঝতে পারবেন আপনি প্রেগনেন্ট৷  

এছাড়াও আরো অনেক গর্ভকালীন লক্ষণ দেখা যায়। তার মধ্যে দেখা যায় মর্নিং সিকনেস, বমি বমি ভাব, মাথা ঘুরানো, স্তন নরম হয়ে যাওয়া, স্তন ভারী অনুভুত কিংবা স্তনে হাল্কা ব্যাথা অনুভুত , অনেকের ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

মাসিক মিস হওয়ার ১০ দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় কিভাবে?

কিছু লক্ষণ এর মাধ্যমে মাসিক মিস হওয়ার ১০ দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়। মাসিক বা পিরিয়ড মিস হওয়ার এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই আপনার শরীরে কিছু লক্ষণ দৃশ্যমান হতে থাকে। এ ধরনের লক্ষণ প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন নারীর মধ্যে দেখা যায় একই রকম দেখা যায়।

  • মাসিক মিস হওয়া
  • খাবারে অনীহা
  • মন-মেজাজ ওঠানামা করা অর্থাৎ মুড সুইং হওয়া।
  • হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে ফুলে যাওয়া
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ
  • অবসন্নবোধ বা মৃদু ক্লান্তি।
  • স্তনের পরিবর্তন (স্তন নরম হয়ে যাওয়া, স্তন ভারী অনুভুত কিংবা স্তনে হাল্কা ব্যাথা)
  • বমি বমি ভাব
  • স্পটিং ও সাদা স্রাব
  • শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি।
আরও পড়ুন ;  সেরা ১০টি ডায়াবেটিস কমানোর উপায়। চিরতরে নিরাময় হবে

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়?

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়
মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো গর্ভধারণের ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে শুরু হয় এবংসময়ের সাথে সাথে লক্ষণগুলো পরিবর্তন হতে থাকে।

  1. গর্ভধারণের ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অনেক নারীর স্তন নরম হয়ে যাওয়া, স্তন ভারী অনুভুত কিংবা স্তনে হাল্কা ব্যাথা অনুভব করতে শুরু করে।
  2. গর্ভধারণের ৩০ দিনের মধ্যে যে লক্ষণ দেখা দেয়, তাহল বমি বমি ভাব। সকালে কিংবা দিনের যেকোনো সময় বমি ভাব হয়।  গর্ভধারণের পর শরীরের ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন  হরমোন বৃদ্ধি পায়। এজন্যই এই  বমি-বমি ভাব বা বমি হয়।
  3. খাদ্যাভ্যাসের স্বাদ  পরিবর্তন ।
  4. জ্বর ও পেটব্যথা।
  5. কোষ্ঠকাঠিন্য।
  6. ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ।

কত দিন মাসিক না হলে গর্ভবতী হয়

আপনার মাসিক যদি নিয়মিত হয়, তাহলে মিলনের পরবর্তী মাসে মাসিক মিস করলে আপনি গর্ভবতী।  নিশ্চিত হওয়ার জন্য মাসিক মিস করার দশ দিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করবেন। যদি নেগেটিভ আসে, তাহলে পাঁচ দিন অপেক্ষা করে আবার টেস্ট করবেন। তারপরও যদি পজিটিভ না আসে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার ঘরোয়া পদ্ধতি

উপরের আলোচনা থেকে কখন প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হয় তা সম্পর্কে নিশ্চয়ই  আপনার ধারণা হয়েছে। এখন ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে প্রেগনেন্সি টেস্ট করা যায় তারই কিছু পদ্ধতির কথা বলব।

প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ: বাড়িতে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সবচেয়ে নিরাপদ এবং সহজ উপায় হচ্ছে প্রেগন্যান্সি কিট।  কিন্তু অবশ্যই ভালো মানের টেস্টিং কিট হতে হবে ।

  • মূত্রের নমুনা দিয়ে, টেস্ট কিটে যে কেমিক্যাল স্ট্রিপ থাকে তার সাহায্যে টেস্ট করা যায়।
  • সকালের প্রথম প্রস্রাব সংগ্রহ করে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হয়। কারণ, সকালের প্রথম প্রস্রাবে HCG হরমোনের পরিমান সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই সঠিক ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বাজার থেকে কেনা প্রেগনেন্সি টেস্ট কিটে। একটি  স্ট্রিপ থাকে এবং সাথে ড্রপার থাকে।
  •  আপনার সংগ্রহ করা ইউরিন থেকে দুই ফোঁটা স্টিপে নির্দিষ্ট জায়গায় দিন অথবা নির্দিষ্ট দাগ টানা জায়গায় ইউরিনে ডুবাতে হবে। তারপরে ১ থেকে ৫ মিনিট ( সময় কমবেশি হতে পারে) অপেক্ষা করুন। কত মিনিট অপেক্ষা করতে হবে তা প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকবে।
  • যদি পজিটিভ হয় তাহলে দুটি লাল দাগ, নেগেটিভ হলে একটি লাল দাগ থাকার কথা। যদি নষ্ট থাকে তাহলে কোনো রকমের দাগ দেখা যাবে না।
  • যদি ফলাফল নেগেটিভ আসে। তার পরেও পিরিয়ড না হয় তাহলে ৫ দিন পর আবার টেস্ট করবেন। 
  • প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ এর মাধ্যমে যে ফলাফল পাওয়া যায়, তা’ সাধারণত ৯৯% ক্ষেত্রে সঠিক হয়ে থাকে।

বাজারের নানা টেস্টিং কিট রয়েছে কিন্তু হাতের কাছে তো সব সময় থাকে না।  আপনি ঘরে ৪ পদ্ধতিতে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারবেন:

১.চিনির সাহায্যে:  সকালের প্রথম প্রস্রাব সংগ্রহ করুন, এতে এক চামচ চিনি মিশিয়ে দিন যদি দলা পাকিয়ে যায় তাহলে সম্ভবত আপনি গর্ভবতী। 

২.টুথপেস্টের সাহায্যে:  একই পদ্ধতিতে সকালে সংগ্রহ করা প্রস্রাবের মধ্যে কিছুটা টুথপেস্ট মিশিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পর যদি  বুদবুদ হতে শুরু করে এবং মিশ্রণের রং পরিবর্তন হয়ে নীল হতে শুরু করে তাহলে আপনি মা হতে চলেছেন।

৩.বেকিং সোডার সাহায্যে:  একটি কাপে সকালে সংগ্রহ করা ইউরিনে ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশান। মিশ্রণটি ছানার মত কেটে যায়, তাহলে সম্ভবত আপনি প্রেগনেন্ট।

৪.ভিনিগারের সাহায্যে: সকালে সংগ্রহ করা ইউরিনে আপনি সাদা ভিনেগার মিশিয়ে যদি দেখেন রং পরিবর্তন হতে শুরু করেছে, তাহলে আপনি হয়তো প্রেগনেন্ট।

সবশেষে,

আশা করি, আপনার যে প্রশ্ন ছিল, শারীরিক মিলনের কত দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়?মাসিক মিস হওয়ার ১০ দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় কিভাবে? গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার ঘরোয়া পদ্ধতি এবং প্রেগনেন্সি রিলেটেড প্রশ্ন ছিল তার উত্তর পেয়েছেন।

মাসিক বন্ধ হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়, এবিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে কিংবা কোনো প্রশ্ন থাকলে, অবশ্যই কমেন্ট বক্সে মতামত প্রকাশ করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

Related Articles

Leave a Reply