শিক্ষা

বক্তব্য কিভাবে শুরু করবেন? সৃজনশীল ভাবে বক্তৃতা দেওয়ার কৌশল

অনেকেরই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাষণ বা বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বক্তব্য কিভাবে শুরু করবেন অনেকেই জানে না। যেকোন সেমিনারে কিভাবে বক্তব্য দিতে হয় অর্থাৎ কিভাবে একটি বক্তব্য শুরু করতে হবে,  এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি সকলে উপকৃত হবেন।

বক্তৃতা শব্দের অর্থ কি?

বক্তৃতা শব্দের অর্থ ভাষণ বা বয়ান।  অর্থাৎ যখন কোন অনুষ্ঠানে বা সেমিনারে অসংখ্য দর্শক ও শ্রোতার উদ্দেশ্যে যে কোন বিষয়ে নিজের মন্তব্য ও যুক্তি পেশ করা হয় অথবা উপস্থাপন করা হয়, তাকেই বক্তৃতা বলে। 

বক্তব্য কিভাবে শুরু করবেন?

সম্ভাষণঃ শুরুতেই যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব সেটা হচ্ছে: সম্ভাষণ। ভাষণ বা বক্তব্যের শুরুতেই উপস্থিতি যারা রয়েছেন; তাদেরকে যথাযথভাবে সম্বোধন করতে হবে। ভাষণ যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে হয়, তাহলে সেখানকার অধ্যক্ষ আর শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অতিথি’ও থাকতে পারে। 

কিভাবে একটি বক্তব্য শুরু করতে হয়

তাই ভাষণ বা বক্তব্যের শুরুতে তাদের উদ্দেশ্যে সম্ভাষণ করতে হবে। যেমনঃ মাননীয় প্রধান অতিথি/ শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ/ উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ/ প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী ভাইবোনেরা/ সম্মানিত উপস্থিতি, এভাবে করে সম্ভাষণ করা যেতে পারে।

বক্তব্যের শুরুতে সম্ভাষণে নমুনা

আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই আজকের অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি,  মাননীয় প্রধান অতিথি,  আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি ও মঞ্চের সামনে উপবিষ্ট সুধিমন্ডলী;  সবার প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

এভাবে আপনি আপনার বক্তব্য শুরু করতে পারেন।

ধরা যাক, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাননীয় অধ্যক্ষ ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন; সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার বক্তব্য এভাবে শুরু করতে পারেনঃ

আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই আজকের অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি,  মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,  সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ও মঞ্চের সামনে উপবিষ্ট সকলের প্রতি আমার হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে শুভেচ্ছা ও সালাম জানাচ্ছি “ 

এভাবে করে আপনি আপনার যে কোন অনুষ্ঠানের উপস্থিত মূল বক্তব্য শুরু করতে পারেন।

বক্তৃতা শুরু করার আগে কি বলতে হয়

আপনি যখন আপনার মূল বক্তব্য সবার সম্মুখে উপস্থাপন করতে যাবেন। তখন তিনটি বিষয় আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবেঃ ১) ভূমিকা, ২) মূল বক্তব্য, এবং ৩) সমাপ্তি।

১) ভূমিকা

অতিথিদেরকে সম্ভাষণ করার পরে, যারা উপস্থিত আছেন তাদেরকে সম্ভাষণ করার পরে ভাষণের মূল বিষয় কি হবে তা নিয়ে শ্রোতদেরকে অবশ্যই ধারণা দিতে হবে যেঃ কি কি বিষয় নিয়ে আপনার মূল বক্তব্যে আপনি আলোচনা করবেন। মনে রাখবেন; যেনো ভূমিকা খুব বেশি দীর্ঘ না হয়।

অনেক ক্ষেত্রেই অনেকেই এই অংশে ধন্যবাদ জানান। যদি আপনার মনে হয় যে আয়োজকদের কে ধন্যবাদ জানানো উচিত;  তাহলে অবশ্যই তাদেরকে ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না।

২) মূল বক্তব্য

ভাষনের মূল বক্তব্য এখানে আলোচনা হবে। চেষ্টা করবেন, যাতে আপনার বক্তব্যের কথাগুলো টু দ্য পয়েন্ট হলে ভালো হয়। কোন কোন বিষয় নিয়ে কথা বলা হবে, আগে থেকেই আপনি আপনার কোন প্যাডে বা কাগজে টুকে রাখলে মনে রাখা আপনার জন্য সহজ হবে।  কারণ মানুষ বেশি কথা শুনতে পছন্দ করে না। অল্প কথায় মূল বক্তব্য সুন্দর ভাবে প্রকাশ করাটাই হচ্ছে বক্তব্যের স্মার্টনেস ও উপস্থিত সৃজনশীলতা।

মূল বক্তব্যের অংশে আপনি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিবেন; টু দ্যা পয়েন্টে বুঝিয়ে দিবেন,  পয়েন্ট আকারেই বুঝিয়ে দিবেন। এজন্য অবশ্যই আপনাকে বক্তব্য শুরুর আগে বারবার এ বিষয়টা একান্তে প্র্যাকটিস করতে হবে।

বক্তব্য শেষে কি বলতে হয়?

এতক্ষণ জানলেন, বক্তব্য কিভাবে শুরু করবেন সে বিষয়ে। এখন জানুন, বক্তব্য কিভাবে শেষ করতে হয়? সে সম্পর্কে।

৩) সমাপ্তি

মূল বক্তব্যের পরে যেটা রয়েছে সেটা হচ্ছে সমাপ্তি। সমাপ্তি আপনি কিভাবে টানবেন? মূল বক্তব্যের পরে আশাবাদ ব্যক্ত করে কিংবা উপদেশ বা অনুরোধ মূলক কথা বলে, আপনি আপনার ভাষণ বা বক্তব্য শেষ করতে পারেন।

ভাষণ বা বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়

বন্ধুগণ!  ভাষণ বা বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো অবশ্যই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে! এখন এই বিষয় নিয়েই বিস্তারিত জানা যাক।

ভাষণ বা বক্তব্যের স্ক্রিপ্ট তৈরি করাঃ ভাষণ যাতে করে নির্ভুলভাবে ভালো মতো পেশ করা যায়,  সেজন্য আপনি আগে থেকেই একটি স্ক্রিপ্ট বা চিরকুট তৈরি করতে পারেন। শুরুতে কিভাবে সবাইকে সম্ভাষণ জানিয়ে আপনি বক্তব্য শুরু করবেন, অথবা কি নিয়ে আপনি আপনার কথা বা বয়ান শুরু করবেন এসবের একটি খসড়া তৈরি করে নেবেন। যেটা আপনার বক্তব্য বা ভাষণ নির্ভুল ও সৃজনশীল রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা রাখবে। 

আরও পড়ুন ;  সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ বলতে কি বুঝায়? আত্তীকরণ কি ও কেন ঘটে?

বক্তব্যে চাই সঠিক উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গিঃ আপনি চেষ্টা করবেন প্রমিত বাংলা উচ্চারণে সঠিক ও শুদ্ধভাবে ভাষণ প্রদান করার জন্য। আপনি যদি ভুলভাল উচ্চারণ করেন,  তাহলে কিন্তু অনেকেই হাসাহাসি করতে পারে। সুতরাং সুন্দর ও ভালোভাবে নিজেকে সবার সামনে উপস্থাপন করার জন্য, অবশ্যই আপনাকে বাংলা প্রমাণিত উচ্চারণ বা সঠিক ও শুদ্ধ উচ্চারণ টাকে ভালোমতো রপ্ত করতে হবে।

আর যদি আপনি সঠিক ভঙ্গিতে শুদ্ধ উচ্চারণের মাধ্যমে আপনার বক্তব্য প্রকাশ করেন। তাহলে কিন্তু সবাই আপনার ভাষণের বক্তব্য সাদরে গ্রহণ করবে।

বক্তব্যের সময় দেখে দেখে না পড়ার  অভ্যাস গড়ুনঃ আপনি চেষ্টা করবেন যখন আপনি বক্তব্য পেশ করবেন,  তখন স্ক্রিপ্ট দেখে দেখে পড়বেন না, এটা উপস্থিত শ্রোতাদের কাছে অনেক সময় বিরক্তিকর হয়ে যায়। 

সুতরাং যদি আপনি দেখে দেখে বক্তব্য দেন,  তাহলে কিন্তু আপনার সামনে যারা দর্শক হিসেবে রয়েছে। তাদের সাথে কিন্তু আপনার স্পিকিং কনভার্শন বা ভাল কমিউনিকেশন তৈরি হবে না।

বক্তব্য শুরু করার কৌশল

বক্তব্য কিভাবে শুরু করবেনঃ মনে রাখবেন যে কোন বক্তব্যে একজন বক্তার জন্য শ্রোতাদের সাথে আইকন টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  সুতরাং,  শ্রোতারা আপনার বক্তব্যকে কিভাবে নিচ্ছে!  তারা কি সত্যিই আপনার কথাগুলোকে উপভোগ করছে কিনা,  এবং মনোযোগ দিতে আরো আগ্রহী হচ্ছে হয়ে উঠছে কিনা সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন।

সুতরাং যে কোন সেমিনার বা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার আগে আপনার স্ক্রিপ্ট টাকে ভালোভাবে গুছিয়ে নিবেন। প্রয়োজনে একান্তে নিজে চর্চা বা প্র্যাকটিস করবেন। এবং পয়েন্টগুলোকে ভালোমতো মাথায় তো করবেন যে আপনি কি কি বিষয়ে উক্ত বয়ানের বক্তব্য পেশ করবেন। এজন্য যদি আপনি সংক্ষিপ্ত আকারে কোন খসড়া তৈরি করে বক্তব্যের মূল বিষয়গুলো পয়েন্ট আকারে লিখে রাখেন;  তাহলে গুছিয়ে কথা বলার  সেরা উপায় খুঁজে পাবেন।

এবং আপনি ভালোভাবে ফাইনালি বক্তব্য দেওয়ার আগে যদি ভালোভাবে আপনি অনুশীলন করেন। অথবা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিভাবে বক্তব্য দেবেন, সেটা যদি আপনি প্র্যাকটিস করেন তাহলে কিন্তু আপনার বক্তব্য অনেক ভালো হবে।

বক্তব্যের আগে অনুষ্ঠানের ধরন সম্পর্কে ধারণা নিনঃ কোন ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য আপনি বক্তব্য দিচ্ছেন তা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। সেটা কি কোন বিদায়ী অনুষ্ঠান,  নাকি কোন পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান, সেটা কি কোন নবীন বরণের সেমিনার,  নাকি কোন দিবস উদযাপনের ফাংশন! নাকি কোন রাজনৈতিক অনুষ্ঠান! সেই অনুযায়ী কিন্তু আপনাকে বক্তব্য প্রদান করতে হবে। 

মাঝে মধ্যে বিরতি নিনঃ বক্তব্য প্রদানের সময় হাঁপিয়ে উঠলে মাঝেমধ্যে বিরতি নিতে পারেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য। আপনার বক্তব্য যদি দীর্ঘ হয়,  এবং কথা বলতে বলতে যদি আপনার শরীরে ক্লান্তি ভাব চলে আসে; তাহলে কথার মাঝেমধ্যে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বিরতি নিয়ে পুনরায় বক্তব্য শুরু করতে পারেন। তাতে কিন্তু আপনি বক্তব্যের মূল পয়েন্টগুলোকে আরো সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলতে পারবেন,  এবং শ্রোতাদেরকে আপনার বক্তব্য  শ্রবণ করার জন্য আগ্রহী করে তুলতে পারবেন।

বক্তব্য কিভাবে শুরু করবেন? উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বারবার অনুশীলন করুনঃ প্রবাদ আছে; “সৃজনশীল ভাবে কথা বলতে পারলে, সকলের মন জয় করা যায়”। এটি প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানানসই ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উক্তি।  সুতরাং যে কোনো অনুষ্ঠানে যদি আপনি উপস্থিত বক্তব্য দিতে চান,  তাহলে তা ঘরে বসে কিংবা একান্তে বারবার আপনাকে অনুশীলন করতে হবে। মনে রাখবেনঃ  যে কোন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বারবার অনুশীলন করার কোন বিকল্প উপায় নেই।

এছাড়াও সাহসিকতা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আপনি বক্তব্য দিতে দিতেই কিন্তু একটা সময় ভালো বক্তা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবেন। আর এজন্য নিজের জ্ঞানকে আরো বেশি বিকশিত করতে ও ভালো বক্তা হওয়ার জন্য,  বেশি বেশি বই পাঠ করতে হবে। কারণ বেশি বেশি বই পড়ার মাধ্যমে  যে কোন বিষয়ে নিজের  জ্ঞানের পরিসীমাকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব।

আর এভাবেই আপনি একটা সময় কি বিষয়ে বক্তব্য দিবেন,  সে বিষয়ে আর ঘাবরাতে হবে না। যেকোনো সময় যেকোনো অনুষ্ঠানেই উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা দিয়েই সৃজনশীল ভাবে বক্তব্য প্রদান করে দর্শক ও শ্রোতাদের মন জয় করতে পারবেন।

বক্তব্য কিভাবে শুরু করবেন,  সেরকম আরেকটি টিপস হলোঃ  কোথাও যদি আপনাকে বক্তব্য দেওয়ার মতো করে সুযোগ প্রদান করা হয়।  তাহলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেই সুযোগটিকে কখনোই মিস করবেন না,  বরং যতটুকুই বলতে পারেন তা দিয়েই বক্তব্য পেশ করা শুরু করুন।

পরিসমাপ্তি,

এতক্ষণ আলোচনা করলাম কিভাবে কোন অনুষ্ঠানে আপনি বক্তব্য দেবেন। এবং বক্তব্য কিভাবে শুরু করবেন, কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন এই নিয়ে বিস্তারিত। যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে চান, যাদের অভিজ্ঞতা এখনো হয়নি; এবং যারা বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দিচ্ছেন। আশা করি সবারই আমার আজকের বক্তব্য দেওয়ার কৌশল ফিচার পোস্টটি ভালো লেগেছে। আল্লাহ হাফেজ।

Related Articles

Leave a Reply